গুরু নেমে আসলেন পাহাড় থেকে। সন্ধ্যার বাতাসে তার শুভ্র চুল উড়ছে। তিনি হাতের বাঁকা লাঠিতে ভর করে দাঁড়ালেন। তীক্ষ্ম দৃষ্টি দিয়ে দেখলেন চারপাশ। এরপর বলতে শুরু করলেন।
—
১
গুরু বললেন, প্রজ্ঞার জন্য শোন
আমারে না, আমার কথারে
আর জেনে রাখো যে
সকল কিছুই একক
২
অনেকে যা দেখে তা বুঝে না
যা শিখেছে তা বিচার করতে পারে না
তবুও তারা বলে বেড়ায় তারা জানে
৩
ফালতু বিষয় দিয়ে
অপ্রয়োজনীয় বিষয় দিয়ে
মানুষ নিজের বুদ্ধি আর চিন্তাক্ষমতারে নাশ করে
চোখকে ব্যবহার করতে পারে না
কানকে ব্যবহার করতে পারে না
৪
তাদের কথা বলা ও শোনার দক্ষতার অভাব
৫
মানুষ টন টন মাটি খুঁড়ে যায়
এক আউন্স স্বর্নের জন্য
৬
সকলই তার অন্তরে রহস্য ধরে রাখে
৭
দুর্বোধ্যতা
অহেতুক ব্যাখ্যা বাদ দিয়ে
প্রকৃত নবীরা সংকেত দিয়ে যান
৮
নবীর কন্ঠ
জগত বিধাতা থেকে সরাসরি আসে
কোন অলঙ্কার লাগে না, লাগে না সুমধুর সুর
কিন্তু প্রবাহিত হয় হাজারো বছর ধরে
৯
কাজে থাকা
চোখ, কান
ও মস্তিষ্ক
আমি এইগুলারেই দাম দেই
১০
যা দেখে চোখ
কান তা বিশ্বাস করে ফেলে, গুজবের মতো
১১
সকল কিছুই আগুনে রূপান্তরিত
এবং আগুন ধ্বংস হয়ে
সকল কিছুতে পরিণত
শস্য বিক্রিত হয়
এবং সেই টাকা দিয়ে কেনা হয় খাবার
১২
সূর্য ছাড়া
দিন কী? আর রাত কী?
১৩
সকল কিছু ধুঁয়াতে রূপান্তরিত হলে
নাকই হবে বিচারক
১৪
যারা প্রজ্ঞা খুঁজে
তাদের আগে দরকার শক্ত বুদ্ধিমত্তা
১৫
শুরুই হলো শেষ
১৬
সময় একটি খেলা
খেলিতেছে সুন্দর ভাবে
বাচ্চারা
১৭
যারা প্রজ্ঞার পথের পথিক
তাই করো যা করেছি আমি
নিজের ভেতরে খুঁজো
১৮
যেইরকম যেই নদীতে আমি পা দিলাম
সেটি ওই নদী আবার নদী না
একইভাবে আমি, আমি না
১৯
গর্দভেরা উপদেশ চায়
তাদের কাছ থেকে, যাদের তারা সন্দেহ করে
২০
জ্ঞানের অভ্যাস কোন মানুষিক বিষয় না
স্বর্গীয়
২১
ভালো চিন্তা হলো
মনযোগ দিয়ে শোনা
এবং এরপর একটা পথ পছন্দ করা
২২
একজন সেরা মানুষ
এক হাজার লোকের চাইতে উত্তম আমার কাছে
২৩
কুত্তারা, একইভাবে
সেইসব জিনিস দেখে চিল্লায়
যেগুলা তারা বুঝতে পারে না
২৪
যা এখনো জানা যায় নি
বাজে বিশ্বাসে অন্ধ যারা
তারা তা কখনো জানতে পারবে না
২৫
প্রত্যেক দিন অন্য দিনের সমান
২৬
নিরবতা, নিরাময়ক
২৭
বছর বছর ধরে
পিতামাতার বাচ্চারা যেরকম
কথা বলে ও কাজ করে
চিন্তাহীনভাবে, সেইরূপ করবে না,
২৮
গুরু বললেন
মানুষের চরিত্রই তার ভাগ্য নির্ধারণ করে দেয়
২৯
মনে রাখবে
রাগের চাইতে
সুখের আহবান নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন
৩০
তুমি যদি প্রজ্ঞা ভালোবাসো
তাহলে অনেক অনেক জিনিস নিয়ে
অনুসন্ধান করতে হবে
—
এই পর্যন্ত বলে গুরু হিরাক্লিটাস লাঠির ভরের বন্ধন থেকে মুক্ত করলেন নিজেকে। তিনি হেঁটে যেতে শুরু করলেন পাহাড়ের পাদদেশ দিয়ে।
সন্ধ্যার বাতাস বইছে।
পেছন থেকে দেখা গেল গুরু হিরাক্লিটাসের শুভ্র চুল উড়ছে, বাতাসে।
–
জুলাই-আগস্ট, ২০২০
#গুরু বললেন