বাজারে যাওয়ার পথে কয়েকটা ব্যাঙ আর কয়েকটা সাপ আমার পকেটে উইঠা আসে, আর তারা বলে, মহামান্য সম্রাট, আপনার কী কী লাগে? এ এক বিষম প্রশ্ন! দূর হইতে দেখতে পাওয়া যায় নৌকায় করে মাছ আসে, কাঁচা কাঁচা সবুজ তরকারী নিয়ে বসে থাকে তরকারীওয়ালা, মাছ বিক্রেতার সামনে ডালায় সাজানো মাছ, কয়েকটা কই লাফাইয়া উঠে। পানি পড়ে, মেঝে স্যাঁতস্যাঁতে হইয়া উঠে, বরফ দেয়া মাছ নিয়া বসে থাকেন আব্দুল গফুর, তিনি বয়স্ক মাছ বিক্রেতা, ঘাগু লোক, অল্প দামে কখনো মাছ ছাড়েন না। একপাশে ছোট্ট জায়গায় চা নিয়া বসে নারায়ণ, লাল চা, দুধ চা, আধা চা, জিরা চায়ের লগে সে সিগারেট, পান ইত্যাদিও ছড়াইয়া দিতে থাকে , তার চায়ের কাপ হতে ধোঁয়া উঠতে থাকে, কাপের মুখভর্তি হইয়া উঠে ফ্যানা, বাইরে থেকে দেখে মনে হয় নারায়ণ খাটি গরুর দুধ দিয়া চা বানায়, মনে হয় গোয়ালিনি কন্ডেন্সড মিল্ক সে চিনে না।
মাছ বিক্রেতাদের থেকে অনতিদুরে বসেন আমাদের সব্জী বিক্রেতারা, মুখভর্তি হাসি ও বিরক্তি তাদের যুগপৎ। তারা সবুজ পটল, কলমী শাক, চিচিঙ্গা, লাউ ইত্যাদি, আর বিবিধ প্রকারের সিজনাল সব্জী লইয়া বসেন। তারা কাচামরিচ লইয়া বসেন। কাচামরিচেরা শুইয়া পরস্পরের লগে কথা কয়, যেন সেই তারাটির সাথে তারাটির কথা। তাহাদের গভীর অনুরাগ, উচাটন মন, আবেগ নিরাকার। এইভাবে জেগে থাকে নৈসর্গিক বন্ধনাবদ্ধ আমাদের শ্রীযুক্ত বাজার।
আমি মাছ বিক্রেতা গফুর মিয়া, হরি বাবু এবং অন্যদের কাছে যাই, সবার নাম জানা নাই, এবং তাদের বলি, ভালো মাছ কী আছে আজ? দেখান দেখান! আমার পকেটে আছেন মন্ত্রী মিনিস্টার।
হরিবাবু জেতা মাছের ডালা তুলে ধরেন আর বলেন, এই দ্যাখেন জিন্দা মাছ!
তারে বলি, জিন্দা মাছ দিয়া করব কী? একুরিয়ামে সাজাইয়া রাখব নাকী? বিরান করে খাবো তাই, তাজা মাছ দেখান।
তখন মাছ বিক্রেতাদের কেউ একজন কই মাছ দেখায়, বড় একটি ডেগের ভিতরে জল আর সেইখানে কালো কালো কইমাছ খালি চক্কর দিয়া বেড়ায়, নাদুশ নুদুশ চেহারা তাদের, দেইখা সন্দেহ হয়, জিগাই, এইগুলা কি ফিশারীর মাছ?
মাছ বিক্রেতা না না কইরা উঠে, সে জানায়, এইমাত্র বিল থেকে ধইরা আনা হইছে, এইগুলা কস্মিনকালেও ফিশারীর মাছ ছিল না, কিন্তু তবুও আমি তখন আমার পাশে দাঁড়িয়ে থাকা আরেকজন ক্রেতার দিকে তাকাই, তিনি চোখের ইশারায় আমারে জানাইয়া দেন, এইগুলা আদি ও অকৃত্রিম ফিশারীর মাছ।
ফিশারীর মাছ আমরা খাইতে চাই না, কারন ফিশারীর মাছেরা নানাবিদ জিনিস, মানুষের গু ইত্যাদি খায় বলিয়া আমরা শুনি, এবং আমাদের অর্থাৎ ক্রেতাদের এতে খারাপ লাগে, ঐসব মাছেদের প্রতি অভিমান হয়, আমরা মনে মনে এই আশা করি, আমরা যে মাছ খাবো তা পোলাও কোরমা খাইয়া বড় হবে, গু খাবে কেন?
মাছ বিক্রেতারে আমি বলি, জিন্দা মাছ রাখেন। আমারে মরা মাছ দেখান। রুই, কাতলা, চিতল, কালবাউশ ইত্যাদি। যারা খালি চাইয়া থাকে।
মাছ বিক্রেতা বরফ দেয়া এবং বরফ না দেয়া মাছগুলি দেখায়। এর মাঝে সন্ন্যাসী সন্ন্যাসী চেহারার একটি মাছ, রুই হবে অথবা কাতল, দূরের দিকে এক দৃষ্টিতে চাইয়া আছে দেখি, এবং দেখতে দেখতে, তার চোখের মায়ায় আমার মায়া উদ্রেক হয় আর এক পর্যায়ে তাকে কিনে ফেলি। মাছ বিক্রেতা মাছ ব্যাগে ভইরা দেয় এবং এক গাল হেসে বলে, দিয়া দেন এইবার কতিপয় মন্ত্রী মিনিস্টার। সময় হইছে দুই কাপ মালাই চা খাওয়ার।
তারে পকেটের একাংশ উজার কইরা দিয়া সব্জীদের দিকটাতে যাই আমি। সব্জী বিক্রেতারা তাদের সব্জীতে খালি পানি ছিটায়।
-১৬ সেপ্টে, ২০১৬-
-এডিট, ৫ জুন, ২০১৮-