তীর্থযাত্রা

একজন মাতাল রাস্তায়
ভায়োলিন বাজাতে বাজাতে একা
হেঁটে যায় ঐ
দারিও আরজেন্টোর ফিল্ম থেকে উঠে আসা এক রহস্যময় রাতে
তার কেউ নাই
কিছু নাই
সে কিছুই নয়
অথবা সম্ভবত সে বিশেষ কেউ
একজন মাতাল
টলতে টলতে একা
হেঁটে যাচ্ছে
হাতে ভায়োলিন
শহরের সমস্ত গল্প হতে
সে বিচ্ছিন্ন কেউ
রাস্তা ধরে হেঁটে যায়
দু পাশে ঘর
শহরের সকল গল্প ঘুমায়
রাত্রির নিস্তব্দতাকে সঙ্গী করে
ভায়োলিন বাজাতে বাজাতে
এক নিঃসঙ্গ মাতাল হেঁটে যায়
আমি তার হেঁটে যাওয়া দেখি
প্রতি পদক্ষেপে সে যেন সময়কে ভেদ করে এগিয়ে যায়
হায়! আমারো তো এমনই ইচ্ছে করে
এইভাবে তার মতো হেঁটে যেতে
রাত্রির নিঃস্তব্দতায় ঘন ঘোর অন্ধকারে
মাতাল পিছু ফিরে দেখে না
তাকায় না কোনদিক
তার দৃষ্টি সম্মুখে
সে যেন মন্ত্রমুগ্ধ এক পথিক
যার পদযুগল এক স্বর্গীয় ছন্দে
ঐশ্বরীক নির্দেশে
বিরামহীন, এগিয়ে চলে
হায়, সে কি হ্যামিলনের বাঁশিওয়ালা
সে কি কোন দূরদেশ থেকে এসেছে আমাদের পাড়ায়
এভাবে কেমনে সে হেঁটে যায়
সময় ও ইতিহাসকে অগ্রাহ্য করে
আমাদের রাজনীতি ও বৈশ্বিক পরিস্থিতিকে আমলে না নিয়ে
কীভাবে সে পারে
এইরূপ দৃঢ় প্রত্যয়ে
টলোমলো পায়ে
কাঁধে নিয়ে ভায়োলিন, হায়!
সে কেমনে বাজায়
কীভাবে সে এইভাবে সকল কিছুকে অগ্রাহ্য করে
অন্ধকারে এগিয়ে যায়
সে কি ডিলানের টাম্বুরিন ম্যান
হয়ত বা সে
আমার এমনই মনে হয়
যদি হয়, তাহলে আমি
নিব কি তার পিছু
এই অন্ধকার রাতে
হায় জীবন
আমার সকল শৃঙ্খল
তুমি আমাকে বেঁধে রেখেছো এতো শক্ত করে
আমি মুক্ত পাখির ডানা
আমি ছুটন্ত বাছুর
আমি উড়তে থাকা চিলদের দেখে
হইনি এতো আকুল
যেমন এই মাতাল লোকটির চলা
তাঁর হেঁটে যাওয়া এই রাত্রে
আমাদের শহরে
সমস্ত কিছুকে তুচ্ছ জ্ঞান করে
এক স্বর্গীয় ভায়োলিন বাজাতে বাজাতে
সে সুর আমাকে
আহবান করছে
সমস্ত শৃঙ্খল ভেঙ্গে নিতে তার পিছু
আমার পা চলে যাচ্ছে ঐদিকে
পথের দিকে
এক তুমুল আকর্ষণে
আমি চলে যাচ্ছি রাস্তায়
আমি চলে যাচ্ছি অন্ধকারে
আমি নগ্ন পায়ে
সম্মোহিত পদক্ষেপে যেন এগিয়ে যাচ্ছি
হে জীবনদেবতা আমার
আমাকে ক্ষমা করো
আমি তোমার বাধ্যগত
সন্তান হতে পারলুম না
পারলুম না একটি কেরিয়ারমুখর
জীবন অতিবাহিত করতে
তুমি মোরে করো ক্ষমা
আমি এগিয়ে চলেছি
আমি সম্মোহিত এক
চলেছি পিছু পিছু
রহস্যময় অচেনা মাতালের
যে এগিয়ে যাচ্ছে
টলোমলো পায়ে
অন্ধকার ভেদ করে
ভায়োলিন বাজাতে বাজাতে

জুন ১৩, ২০২০

শেয়ার