তারে আমি বললাম, এই যে বাংলা ফিল্মের অশ্লীল যুগের জন্য অনেক নাইকারে দোষ দেয়া হয়, এইটা ঠিক না।
সে জিজ্ঞেস করে, কেন?
আমি বলি, কারণ তাদের অনেকের তেমন দোষ নাই। কাটপিস করছে অন্যরা। আর মেইন দোষ হইলে তো হওয়ার কথা প্রযোজক পরিচালকের।
সে বলে, কিন্তু তাতে তোমার কী সমস্যা, এদের জন্য দরদের কী কারণ?
আমি বলি, দরদ না, যে যেই দোষ করে নাই তারে সেই দোষ দেয়া যাবে না, আর দেয়া হইতেছে দেখলে এর প্রতিবাদ করতে হবে, পি জি উডহাউজরে যখন নাৎসি নাম দিয়া দোষারূপ করা হইতেছিল তখন জর্জ অরওয়েল, যিনি শুরুর দিক থেকেই নাৎসি ফ্যাসিবাদের বিপদ নিয়া সতর্ক করছিলেন, সেই অরওয়েল বড় এক প্রবন্ধ লেইখা বিরোধীতা করেন। তার পয়েন্ট ছিল উডহাউজ গর্দভ, স্বার্থপর, রাজনীতি কম বুঝা কাপুরুষ হইতে পারে, তার কাজগুলা এরই স্বাক্ষী দেয়, কিন্তু সে নাৎসি না।
এই যে অরওয়েলের ব্যাপারটা, এইটা একটা মহান জিনিস। যার যে দোষ নাই ওই দোষ দেয়া যাবে না। দেয়া হইতেছে দেখলে প্রতিবাদ করতে হবে। অরওয়েল এইজন্য একজন মহান লেখক, আমি আমার পেছনের ওয়ালে তার একটা ছবি টাঙাবো।
এইভাবে পেছনের ওয়ালে ছবি লাগানোর প্রসঙ্গ আসে।
পড়লাম যখন বোর্হেস লিখেছেন যে, আমার অস্তিত্ব আছে কি না আমি নিশ্চিত নই আসলে, যেইসব লেখক আমি পড়েছি, যেইসব লোকদের সাথে মিশেছি, যেইসব নারী ভালোবাসিয়াছি, যেইসব শহর ভ্রমিয়াছি, যেন আমি তার সকল।
পড়ে আমি বলি দেয়ালে বোর্হেসের ছবি লাগাবো, বোর্হেস মানেই অন্ধকার, বিড়াল ও তার হাতের লাঠি।
কাম্যুর প্রসঙ্গ আসলো একবেলা, যখন আমি কোন একটা বিষয়ে না করতে গেছিলাম, আর তখনই মনে পড়লো কোথাও আলবেয়ার কাম্যু লেখছিলেন রেবেল হইল সে যে বলে ‘না’। এইরকম খাপে খাপ কথা মিলে গেলো আর কাম্যুরে আমার আপন লাগলো তখন, বললাম আমার পেছনের দেয়ালে লাগাবো আলবেয়ার কাম্যুর ছবি।
সি-গুলে চেখভ লেখছিলেন, ডাক্তার কাগজে দার্শনিক হওয়া কতো সহজ আর বাস্তব জীবনে হওয়া কতো কঠিন। এই লাইনের জন্য আমি চেখভরে একবার বসাইতে চাইলাম আমার দেয়ালে।
আব্দুল করিমের গান শুনতে শুনতে একবার বলি, শাহ আব্দুল করিমের একটা ছবি লাগাবো, আমার পেছনের দেয়ালে।
আরেকদিন রাম্বল ইন দ্য জাংগলের প্রসঙ্গ আসলে বলি লাগাব মোহাম্মদ আলীর ছবি।
আরেকদিন ভিটগেনস্টাইনের। যিনি বলছিলেন অনেক কথাই, তার মাঝে একটা হইল, দার্শনিকীকরণ হলো বাজে আর্গুমেন্টরে রিজেক্ট করা।
কথায় কথায় একেকবারে একেকজনের নাম আসতে থাকে।
আর সে বলে, আরেকদিন না বলছিলা আরেকজনের ছবি লাগাইবা, তোমার দেয়ালই কত বড়, এর মাঝে একেকদিন একেকজনের ছবি লাগানোর কথা বলো।
কথাটা ঠিকই।
আমিও ভাবি।
কিন্তু ছবি আর লাগানো হয় না।
শেষে সে বলে, তোমার ছবি লাগাইয়া দেও বড় কইরা, সবারই গুণাগুণ কিছু কিছু মিলেই তো তুমি।
আমি মনে মনে ভাবি, এইজন্যই তো লোকে প্রেম করে। আকাশ পাতাল প্রশংসা শোনার জন্য।
তবুও ছবি আর লাগানো হয় না।
আর সামনের দেয়ালে তার ছবি ঝুলে আছে, তা সে জানেই না।
৫ আগস্ট, ২০২০