গুরুর সাথে (তিন)

আমরা আলোচনা করতেছিলাম, স্যাক্রিফাইস তো লাগবেই 

লিলেনথাল গ্লাইডার দিয়া ৫০ ফিট উইঠা গেছিলেন না? 

মনে নাই উনি কী বলছিলেন পইড়া মইরা যাবার আগে? 

স্যক্রিফাইস অবশ্যই দরকার 

গুরুর জন্য আমাদেরও স্যাক্রিফাইস করন লাগব, বলল একজন 

আমরা হ হ বলে মাথা নাড়লাম 

গুরু লাঠিতে ভর দিয়া আমাদের পেছনে আইসা দাঁড়াইছিলেন 

কবে আসছিলেন উনি আমাদের জানা নাই 

বাতাসে উড়তেছিল তার শুভ্র চুল 

মরুভূমিতে বালু বাতাসে চক্রাকার কিছু দূরে দূরে 

গুরু পেছন থেকে বললেন, কী স্যাক্রিফাইস করবা তোমরা? 

আমরা অবাক হইয়া তাকাই

গুরুর প্রশ্নে হতচকিত, তবু, উত্তর দেই, আপনে যা আদেশ করেন 

গুরু বলেন, তাইলে হাত দিয়া দেও। 

আমরা সবাই হাত বাড়াইয়া দেই 

গুরু বলেন, কাইটা দেও, ওই যে মাংস কাটার ছুরি।

আমরা ভয় পাই

গুরু ফাইজলামি করেন না 

চাইছেন যখন, চাইছেনই 

গুরুর প্রতি আমাদের ভক্তি অতিশয় 

তিনি দুনিয়া মহাকাল সকল জন্মের সকল জ্ঞান 

জানা অজানার উর্ধ্বে বসে সবিস্তারে সকল দেখেন 

আমি দৌড়াইয়া গিয়া ছুরি হাতে নেই 

হাত নিচে ফালাইয়া ছুরি দিয়া কোপ দিতে যাই 

আমাদের ভয় হয় 

হাত চলে গেলে আমাদের কী হবে 

ফলে আমাদের এই ছুরি হাতে নেয়া কতকটা অভিনয়, বলিতে পারেন কেউ, আপত্তি নাই 

আমাদের মুখশ্রী বিমর্ষ হয় 

মরুভূমির সন্ধ্যার মতোই 

গুরু আমাদের মনের অবস্থা বুঝেন 

তিনি সর্বজ্ঞানের আধার 

হাত তুইলা বলেন, লাগবে না। 

তোমরা ভাত রানতে বসো 

আমরা খুশি হইয়া ভাত রানতে যাই 

গোল হইয়া বইসা আগুন জ্বালাই 

মাংস পুড়াই 

আলাপ জমে মরুভূমির আন্ধারে 

গুরুর মহানুভবতার কথা স্মরণ করে মুগ্ধ হই 

গুরুর জন্য কে কত তাড়াতাড়ি হাত কাইটা ফেলতাম তা আমরা বলি 

এও বলি, দুই হাত, এমনকী পাও আমরা কাইটা ফেলতে পারি গুরুর জন্য 

বলতে বলতে আড়চোখে পিছনে তাকাই 

দেখি গুরু লাঠি হাতে ওইখানে নাই 

ফেব্রুয়ারি ১৬, ২০২২ 

শেয়ার