গুরুর সাথে (চার)

গুরু বললেন, যে ইতিহাস লেখা হয়, ঐটা যাপিত হয় না।

আমরা বলি, ক্যামনে গুরু?

গুরু বলেন, যারা ইতিহাস লেখে তারা তাদের কাছে যেটা ইন্টারেস্টিং লাগে, ঐটাই তো লেখবে। ফলে, হিস্টরি আর যাপিত সময়ের মধ্যে ফারাক থাকে।

আমরা বলি, গুরু মানুষেরা কত কঠিন পরিশ্রম করে। এর থেকে মুক্তি কী প্রকারে?

গুরু বলেন, কঠিন পরিশ্রমে তো মানুষের আপত্তি নাই, দুর্দশাও সে সইতে পারে। কিন্তু সইতে পারে না তার প্রয়োজনহীনতা। আধুনিক সমাজের মূল সমস্যা হইল, সে সর্বপ্রকার চেষ্টায় রত মানুষরে প্রয়োজনহীন ফীল করাইতে। এই জায়গা নিয়া তোমাদের আরো ভাবতে হবে।

কতক ভাবনা ও কতক ভাবনার অভিনয়ে আমরা মাথা নাড়ি। বলি, ঠিকই গুরু।

আমাদের একজন বলে, গুরু ভালো সিদ্ধান্ত নিব কী করিয়া?

গুরু বলেন, মনে রাখবা তোমার যাবতীয় নলেজ হইল অতীত অভিজ্ঞতা থেকে, আর সিদ্ধান্ত হইল ভবিষ্যৎ নিয়া।

আমাদের ভেতরে নতুন আসা একজন পেছনে বসে তার স্মার্টফোনে কী জানি দেখতেছিল। সে ভাবছে গুরু হয়ত দেখবেন না। কিন্তু গুরু সকল কিছু দেখেন, যা দেখেন না, তা দেখেও না দেখেন।

গুরু ওই ছেলেটারে উদ্দেশ্য করে বললেন, মোবাইলে ভিডিও দেখতেছ যে, তুমি এইদিকে আসো।

হতভম্ব ছেলেটা ভয়ে ভয়ে আগাইয়া গেল।

গুরু হাত বাড়াইয়া বললেন, মুবাইলখানা দেও।

ছেলেটা মোবাইল দিল।

গুরু হাতে নিয়া মোবাইল নাই করে দিলেন।

বললেন, আরাম একবার পাইয়া বসলে প্রয়োজন হইয়া যায়। আর অনেক অনেক আরাম যখন এইরূপ প্রয়োজন হইয়া উঠবে, তখন মানুষ তার মূল অনুভূতিগুলা হারাইয়া ফেলে। আর মূল অনুভূতি ছাড়া সমগ্র মানবের লগে কানেক্ট হওয়া যায় না।

ছেলেটা অবাক হইয়া তাকাইয়া ছিল। আমরাও। গুরুর কথার প্রভাব কম, বেশি প্রভাব তার নিমিষেই মোবাইল নাই করে দেয়ায়।

গুরু সব জানেন, সব বুঝেন। তিনি আমাদের মনের অবস্থা বুঝতে পারলেন।

বললেন, অবাক হইও না। ইতিহাস না দেখলে প্রায় জিনিশরেই মনে হয় অবাক করার মত, অভূতপূর্ব।

-মার্চ ৭, ২০২২

শেয়ার